প্রাচীনকাল থেকে মসুর ডাল খাবার হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসলেও রূপচর্চায় এর বিশেষ ব্যবহার রয়েছে। মসুরের ডালে উপস্থিত প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট , কার্বোহাইড্রেট ডায়াটারি ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, সি, ই, কে এবং থায়ামিন , নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। সেই সঙ্গে ত্বকের ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিয়ে ত্বককে সুন্দর করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
নিয়মিত মসুরের ডাল দিয়ে বানানো নানাবিধ ফেইস মাস্ক মুখে লাগাতে শুরু করলে ত্বকে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। ফলে ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠতেও সময় লাগে না। চলুন ত্বকের যত্নে মসুরের ডাল ব্যবহারের কিছু কারণ জেনে নেওয়া যাক।
ত্বকের যত্নে মসুরের ডাল
১. ত্বককে উজ্জল করে তোলে: ত্বকের যত্নে মসুরের ডাল, বাদাম তেল ও মধু দিয়ে বানানো ফেইস মাস্ক অল্প সময়ে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে। এক্ষেত্রে ৫০ গ্রাম মসুর ডালকে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে উঠে পানিটা ছেঁকে নিয়ে ডালটা বেঁটে নিতে হবে। তারপর ডালের পেস্টটির সঙ্গে ১ চামচ কাঁচা দুধ এবং পরিমাণমত বাদাম তেল মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর পেস্টটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে কম করে হলেও ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা।
২. ফেইসওয়াশ হিসেবে: ত্বকের যত্নে মসুরের ডাল, হলুদ, নারিকেল তেল মিশিয়ে বানানো ফেইস ওয়াশ নানা কাজে সারাদিন আমাদের বাসার বাইরে কাটাতে হয়। ফলে পরিবেশ দূষণের কারণে ত্বকের বারোটা বেজে যেতে সময় লাগে না। এমন পরিস্থিতিতে দিনের শেষে মসুর ডাল দিয়ে ত্বককে পরিষ্কার করলে স্কিনটোনের উন্নতির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের কারণে ত্বকের কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে ১ চামচ বাঁটা মসুর ডালের সঙ্গে ২ চামচ দুধ, অল্প পরিমাণে হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর মিশ্রণটি সারা মুখে লাগিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা।
৩. বয়সের ছাপ দূর করে: মসুর ডাল বয়সের ছাপ কমাতেও কার্যকর। রোদেপোড়াভাব কমাতে প্যাক তৈরিতে এই ডালের গুঁড়ার সঙ্গে শুকনো ফল যোগ করলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৪. মুখে অযাচিত লোম অপসারণ করে: ত্বকের যত্নে মসুর ডালের পাউডার, দুধ, বাদাম তেল দিয়ে বানানো প্যাক অনেক মহিলাই আছেন যাদের মুখে অযাচিত লোম থাকে। এমন সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে ১ চামচ মসুর ডালের পাউডারের সঙ্গে ১ চামচ চালের গুঁড়া মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে এবং তার সঙ্গে যোগ করতে হবে ১ চামচ দুধ ও বাদাম তেল। সবকটি উপাদান মেশানোর পর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৫ ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে: তৈলাক্ত ত্বকের ফেইস প্যাকের সঙ্গে ভিনিগার যোগ করলে উপকার পাওয়া যাবে, সাধারণ ত্বকে এর সঙ্গে টক দই ও সাদা ভিনিগার মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মালিশ করে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। সাদা ভিনিগারের বদলে লেবুর রস যোগ করা যেতে পারে।”
৬. শুষ্ক ত্বকের যত্নে মসুরের ডাল: পরিমাণমত মসুর ডালের পেস্ট-এর সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল মিশিয়ে ভাল করে বেটে নিয়ে এই পেস্টটি বানাতে হবে। তারপর সেটি কম করে হলেও ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
৭. মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ফেলে: ত্বকের যত্নে মসুর ডাল, দুধ দিয়ে বানানো ফেইস প্যাক ত্বকের উপরি অংশে জমে থাকা মৃত কোষের স্তর সরিয়ে স্কিনকে প্রাণবন্ত করে তুলতে এই ফেইস প্যাকটির কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে দু’বার পরিমাণমত মসুর ডালের পেস্টের সঙ্গে অল্প করে দুধ মিশিয়ে যদি মুখে লাগানো যায়, তাহলে ত্বকের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলা বা স্কিন বুড়িয়ে যাওয়ার মতে দুশ্চিন্তা একেবারে দূরে পালায়।
৮. ত্বককে নিমেষে সুন্দর করে তোলে: ত্বকের যত্নে মসুর ডাল, দই, বেসন দিয়ে বানানো ফেইস প্যাক ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে বেসন এবং দইয়ের কোন বিকল্প নেই বললেই চলে। তার উপর যদি এই মিশ্রণে অল্প করে মসুর ডাল মিশিয়ে দিতে পারেন, তাহলে তে কথাই নেই! কারণ এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো পেস্টটি এত মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর হয় যে ত্বক সুন্দর হয়ে উঠতে সময়ই লাগে না।
Login to ask a question