তোকমা ছোট কালো রঙের একটি বীজ তোকমা, যা মূলত বিভিন্ন মিষ্টি পানীয় কিংবা শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও তোকমা বীজ অন্যতম একটি উপাদান। এটি স্থানভেদে সবজা বীজ, মিষ্টি বাসিল, ফালুদা বীজ কিংবা তুর্কমারিয়া বীজ হিসেবে পরিচিত। বহু গুণ রয়েছে বীজটির।
চলুন জেনে নিই, নিয়মিত তোকমা সেবনের: জাদুকরী কিছু উপকার।
১.কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর তোকমা। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
২.ওজন কমাতে: অনেকেই শরীরের ওজন কমাতে চায়। সেজন্য তোকমা অনেক সহায়ক খাদ্য হিসেবে উপকার করে থাকে। এতে কেবল আঁশই থাকে না। তোকমা শরীরে অনেক শক্তিও সরবরাহ করে। যদি তোকমা দানা বাদাম ও শুকনো ফলের সঙ্গে মিশ্রণ করে একমুঠো পরিমাণ খাওয়া যায়, তাহলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধামুক্ত থাকা যায়। এ জন্য খুব সহজেই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
৩.দেহের তাপ কমায়: তোকমা গরমকালে দেহের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। আর এ কারণে গরম আবহাওয়ার দেশগুলোতে বহু মানুষ তোকমার শরবত পান করে। এটি সুস্বাদু করার জন্য চিনি, মধু, এমনকি কোথাও কোথাও নারিকেল দুধ দেয়া হয়।
৪.রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ: রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
৫.এসিডিটি দূর করে: তোকমা এসিডিটি দূর করতেও কার্যকর। এটি পেটের এসিড নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালাপোড়া দূর করে। এজন্য পানিতে সামান্য তোকমা বীজ ভিজিয়ে রেখে পান করতে হবে। তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।
৬.সুস্থ ত্বক ও চুল: ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এজন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
৭.ঠাণ্ডার সমস্যায়: তোকমা বীজে রয়েছে ঠাণ্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।
৮.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: তোকমা বীজে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভনয়েড এবং ফেনোলিক উপাদান সমূহ। একইসাথে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ থাকার ফলে তোকমা গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়। একইসাথে, ফ্রি-রেডিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করতেও বেশ উপকারী তোকমা।
৯.মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে: প্রদাহ-বিরোধী উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতরের প্রদাহ, ইনফেকশন, আলসারসহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় তোকমা দারুণ কাজ করে থাকে। তোকমাতে থাকা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতর একদম ফ্রশ থাকে। বিশেষ করে মুখের ভেতর কোন ইনফেকশন, দাঁতের ক্ষয় রোগ (ক্যাভিটিজ) এবং মুখের দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে না।
১০.পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে: তোকমার বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হলে সেটা ফুলে, বড় হয়ে তার শরীরের বাইরের আবরণে জেলী জাতীয় পদার্থ তৈরি করে। এটাই খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও, তোকমাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, খাদ্যকে দ্রুত পরিপাক হতে সাহায্য করে থাকে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, ডায়রিয়া অথবা আমাশয়ের মতো পেটের সমস্যাতে তোকমার বীজ খুবই উপকারী। এছাড়াও তোকমা বীজের তেল গ্যাস্টিক আলসার সমস্যার জন্যে উপকারী একটি উপাদান।
*সতর্কতা: গর্ভবতী নারীদের দেহের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে তোকমা। তাই গর্ভবতী নারী ও শিশুদের তোকমা খাওয়া উচিত নয়। ভালোভাবে পানিতে গুলিয়ে না খেলে এটি পেটে ফুলে যেতে পারে। এতে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, এমনকি শিশুদের শ্বাসরোধও হতে পারে।
Customer Questions and answers :
Login to ask a question